জাতিসংঘ প্রতিবেদনে হাসিনার অশনি সংকেত!
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১ AM

জাতিসংঘ প্রতিবেদনে হাসিনার অশনি সংকেত!

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত: ০১/১১/২০২৪ ১০:৪২:৫৯ AM

জাতিসংঘ প্রতিবেদনে হাসিনার অশনি সংকেত!


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে, জাতিসংঘ সেটির স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দায়িত্ব দেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের অফিসকে। তারা এক মাস পর প্রতিবেদন দাখিল করবে।

তিনি আরো জানান, সংশ্লিষ্ট হাই কমিশন অফিস ইতোমধ্যে তাদের তদন্ত সম্পন্ন করেছে, এখন প্রতিবেদন দেবার পালা। এজন্য এক মাস লাগবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের কোন ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা ছাড়াই এই তদন্ত কার্য সম্পন্ন হয়েছে, যা স্বৈরাচারী হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অনেক চেষ্টা করেও করতে পারেনি জাতিসংঘ। অতীতে জাতিসংঘ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের বিশেষভাবে গুম বিষয়ক তদন্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু হাসিনা সরকার অনুমতি দেয়নি। এদেশে গুমের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জাতিসংঘের দাবি ও অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ এবার ঘটেছে এর সম্পূর্ণ উল্টো ও ব্যতিক্রমী ঘটনা।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, আমরা ওপেন এন্ডেড। আপনারা যা দেখতে চান দেখুন। আমি বা আমার লোকজন আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করেন। আপনাদের যদি প্রয়োজন লাগে, তবে আমাদের বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। তারা সহায়তা করবে। এতে বুঝা যায়, অত্যন্ত স্পষ্ট অবস্থান ও বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারের। আশা করা যায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও স্বাধীন অভিমত ও তথ্য সম্বলিত তদন্ত রিপোর্ট দিতে সক্ষম হবে।

লক্ষণীয় যে, গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেড় মাসে বাংলাদেশে যুগান্তকারী কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা যুগপৎ ঐতিহাসিক ও নৃশংস তথা রক্তক্ষয়ী। বাংলাদেশের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ তাদের দেড় দশকের অবৈধ শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে ও টিকিয়ে রাখতে চরম নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার পথ বেছে নেয়। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও শাসক গোষ্ঠীর বেপরোয়া স্বৈরাচারী মনোভাব ও পদক্ষেপ আন্দোলনকে একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপ প্রদান করে। দেশের ছাত্র-জনতা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। দুর্মর ছাত্র জনতা অকাতরে প্রাণ ও রক্ত উৎসর্গ করে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটায়। এজন্য দেড় হাজারেরও অধিক ছাত্র জনতাকে জীবন দিতে হয় পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের গুন্ডাবাহিনীর হাতে। আহত হয় প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ।

দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দেড় দশকেও যা পারেনি ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে জনগণ মাত্র দেড় মাসে তা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এজন্য অঝোরে ঝরতে হয়েছে প্রাণ ও রক্ত। এ সময় হাসিনা ও তার সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষভাবে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীরা বিশেষভাবে ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর হাজার হাজার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে, যাতে সংঘটিত হয় নিকট ইতিহাসের এক জঘন্য ও নৃশংস গণহত্যা। এর সাথে ছিলো আয়নাঘর নামক টর্চার সেলসহ অসংখ্য টর্চার সেলে অমানবিক নিপীড়ন নির্যাতন ও গুমের ঘটনা। আর এসবই তদন্ত করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন।

কমিশনের রিপোর্টে হাসিনা এবং তার দল ও সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে গোটা বিশ্বে জাতিসংঘের সবগুলো সদস্য দেশ তা অনুসরণ করবে। এর মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তা গ্রহণ করবে। যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বা এ ধরনের গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হবে, সে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়বে। জাতিসংঘও এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে। এর প্রভাব পড়বে এসাইলাম দাবিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এমনকি এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসমূহে মামলার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে। তাই বলা যায়, জাতিসংঘ হাই কমিশনের এই রিপোর্ট বা প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হয়ে থাকবে।

সম্পাদকীয়

সিলেটজুড়ে


মহানগর