
সিলেট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিলেটি নেতাসহ ঢাকাস্থ বিভিন্ন সিলেটি সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, রেলওয়ে ও বিমানপথে চলমান জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই অঞ্চলের জনগণ প্রতিদিন নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সিলেট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও পর্যটন অঞ্চল। অথচ সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এই অঞ্চলের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধাণ না করা হলে বৃহত্তর সিলেটবাসী আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলেও তারা সতর্ক করেন।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসীর’ ব্যানারে আয়োজিত এক বিশাল মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তরা এসব কথা বলেন।
মানববন্ধনে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ১৬ বছরে সিলেটে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। ঢাকা-সিলেটের ৬ লেনের নির্মাণাধীন সড়ক এখন সিলেটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় বিট্রিশ আমলে নির্মিত রেললাইনে কোনো সংষ্কার হয়নি। লক্কড়-ঝক্কড় রেললাইনে ঘন ঘন দুর্ঘটনা হচ্ছে। নতুন একটি রেল লাইন ও একটি নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিলেটের বিমান ভাড়াও প্রতি মুহুর্তে বাড়ছে। এর বাইরেও নানা ক্ষেত্রে সিলেট বঞ্চিত রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই কবে ঢাকা-সিলেট ৬ লেন সড়কের কাজ শেষ হবে, কবে রেললাইন সংষ্কার ও নতুন ট্রেন চালু হবে? যদি ১৫দিনের মনে আমাদের দাবি পূরণ না করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামব। সিলেটের উন্নয়নের দাবি নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র, আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। আমরা সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সম্পাদক এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল বৃহত্তর সিলেট। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের দিক দিয়ে একটি ভরপুর এলাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সিলেটিরা সমৃদ্ধ রাখলেও উন্নয়নের দিক দিয়ে সিলেটিরা বঞ্চিত। সিলেটে রেলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথে সিলেটিরা সবচেয়ে অবহেলিত। আমরা এই বিষয় নিয়ে সড়ক উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেও তিনি আশার কোনো বাণী শোনাতে পারেননি। যদি সড়কপথের কাজ যদি দ্রুত শেষ না হয় এবং অনতিবিলম্বে নতুন ট্রেন এবং ট্রেনের বগি যদি বাড়ানো না হয় এই আন্দোলন পুরো সিলেটজুড়ে ছড়েয়ে পড়বে।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান বলেন, সিলেটের রেলপথে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস ট্রেন চালুসহ প্রতিটি ট্রেনে যদি নতুন বগি সংযোজন না করা হয় তাহলে আগামী ১ নভেম্বর আমরা সিলেটজুড়ে ট্রেন অবরোধ করব। আমরা মনে করি কঠোর আন্দোলন ছাড়া আমাদের দাবি পূরণ হবে না। তাই আমরা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করে নিব।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার কথা নয়। সারাদেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। অথচ সিলেট অবহেলিত। বিগত সরকার সিলেটের কোনো উন্নয়ন করেনি। যদিও তারা জনগণের ভোটে প্রতিনিধি ছিলেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন তালিকায়ও সিলেট নেই। সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে সিলেট বঞ্চিত। যদি সিলেটবাসীর দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সিলেটিরা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধসহ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করব।
মানববন্ধনে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম কয়েস সামীর সভাপতিত্বে ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন ও সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির (সিবিসাস) সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমদের পরিচালনায় বিএনপি আবেদ রাজা, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আকরব হোসেন মঞ্জু, নির্বাহী সদস্য তোফায়েল খান, প্রবীণ আইনজীবী তবারক হোসেন, সিবিসাসের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক দেশবার্তার সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ, বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম, জামায়াতে ইসলামী পল্টন শাখার আমির শাহীন আহমদ খান, সিলেট বিভাগ যোগাযোগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন সোহেল, রেল সংস্কারে ৮দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন কুলাউড়ার সমন্বয়ক আজিজুল ইসলাম, আতিকুর রহমান আখই, সংগঠক আবু বক্কর সিদ্দিক, সুজন মিয়াসহ সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক-সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃদ্ধ।
আজকের সিলেট/এপি
