
সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সব মত ও পথের ব্যবসায়ীদের সংমিশ্রণ রয়েছে এই সংগঠনে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে এখানে। যার কারণে সিলেট চেম্বারের নির্বাচন মানেই থাকে অনেক কিছুর হিসাব নিকাষ। থাকে সিলেটের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের চোখ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে সিলেট চেম্বার। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌসের নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যক্রম চললেও সদস্যদের দাবির মুখে সভাপতি ও চার পরিচালক পদত্যাগ করেন, ফলে কার্যত চেম্বার অচল হয়ে পড়ে।
এবার সকল সংকট কাটিয়ে নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনটি। আগামী ১ নভেম্বর চেম্বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরইমধ্যে তফসীল ঘোষণাসহ সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। নির্বাচনি আমেজে মুখর হয়ে উঠেছে সিলেটের ব্যবসায়িক অঙ্গন।
নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছে দুটি প্যানেল। সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী ফোরাম নামে এই দুই প্যানেলে রয়েছেন ৪২ জন প্রার্থী। চেম্বার নির্বাচন কমিশন এখনও বৈধ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করলেও প্রতিদিনই প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল-বিপনী বিতানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের প্রার্থী ফালাহ উদ্দিন আলি আহমদ। অন্যদিকে সভাপতি পদে বিপরীত প্যানেলে রয়েছেন এহতেশামুল হক চৌধুরী।
এছাড়াও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হুমায়ুন আহমদ ও সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন মাছুম ইফতেখার রসূল শিহাব। অপরদিকে সিলেট ব্যবসায়ী ফোরাম প্যানেল থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী, সহ-সভাপতি রয়েছেন মো. নাফিস জুবায়ের চৌধুরী।
সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলে অর্ডিনারি শ্রেণিতে পরিচালক পদে রয়েছেন আক্তার হোসেন, এনায়েত আহমেদ মনি, মোহাম্মদ সাহিদুল হক সোহেল, মো. মুজাহিদ খান গুলশান, মো. মাসনুন আকিব বড়ভূইয়া, জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, ডা. নুরুল হাসান সিদ্দিকী, ইমতিয়াজ তাহমিন সুবহান বাবু, আব্দুল হাফিজ জোয়ারদার তুহিন, এনামুল হক কুটি, মো. তোফায়েল হোসেন (কচি) ও আব্দুল বাছিত।
অপর প্যানেল সিলেট ব্যবসায়ী ফোরাম থেকে অর্ডিনারী শ্রেণিতে পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আব্দুর রহমান রিপন, মোতাহার হোসেন, আব্দুল হাদী পাবেল, সৈয়দ জাহিদ উদ্দিন, মো. ইমরান হোসাইন, মো. আবুল কালাম, খন্দকার কাওসার আহমদ রবি, মো. মাজহারুল হক, মো. নাহিদুর রহমান, কামরুল হামিদ, শামছুর রহমান কামাল ও আবু সুফিয়ান।
অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে পরিচালক পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলে রয়েছেন চন্দন সাহা, আব্দুর রহমান, ওমর ফারুক, মো. আবুল কালাম, মশিউর রহমান হাফিজ ও নজরুল ইসলাম। অপর প্যানেলে একই পদে রয়েছেন জিয়াউল হক, মোক্তাদির হোসেন তাপাদার, মো. মামুনুর রশিদ, দিবাকর দাস ঝোটন, রেহান উদ্দিন রায়হান ও মো. ইব্রাহিম খলিল।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্যানেলই ইতোমধ্যে সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করেছে। সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মতবিনিময় করেছে।
অন্যদিকে সিলেট ব্যবসায়ী ফোরাম নগরীর রংমহল টাওয়ার ও শুকরিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে, লিফলেট বিতরণ করেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ফালাহ উদ্দিন আলি আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করব এছাড়া প্রান্তিক এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা কাজ করে যাবো। সিলেট অর্থনীতির বিরাট একটা ভাণ্ডার। বিগত সময়ে সরকার এগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের দূরে রেখেছিল। আমরা এই দিকটাতে নজর দিব। আমরা প্রতিনিয়িত ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি, তাদের কাছে যাচ্ছি, আশা করি নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্ধীতামূলক হবে।
ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি প্রার্থী এহতাশামুল হক চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের ফসল এই নির্বাচন। চেম্বারকে পুনরায় কার্যকর ও সিলেটকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের অ্যাসোসিয়েট শ্রেণির পরিচালক পদপ্রার্থী এবং জকিগঞ্জ আমদানী ও রপ্তানীকারক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমি তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চেম্বারকে ব্যবসাবান্ধব করে তুলতে আমি সক্রিয়ভাবে কাজ করবো। নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করব।’
সিলেট ব্যবসায়ী ফোরামের অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে পরিচালক পদপ্রার্থী মোক্তাদির হোসেন তাপাদার বলেন, ৫ আগষ্টের পর সিলেটের ব্যবসার পরিবেশ নেই বললেই চলে। সিলেটের ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করব। সিলেট অর্থনৈতিক জোন গড়ে ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক সাঈদা পারভীন বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি যথাযথভাবে এগুচ্ছে। বিস্তারিত নির্বাচন কমিশনার বলতে পারবেন। এখন পর্যন্ত যাদের প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে তারা কমিশনে আপিল করেছেন। আগামী ২২ অক্টোবর শুনানি হবে।
এর আগে গত ৪ আগস্ট সিলেট চেম্বার নির্বাচন বোর্ড ২০২৫-এর চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নুরে জামান চৌধুরী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাছাড়া বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২২ অক্টোবর। কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে ২৭ অক্টোবর আবারও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
