
২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই জুলাই যতবার আসবে আওয়ামীলীগ ঠিক ততবার কাঁদবে। আওয়ামীলীগের জন্য শোকের মাস হলে ও ছাত্রজনতার কাছে জুলাই এক বিপ্লবের মাস বীরত্বের মাস। জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণআন্দোলন আগষ্ট গিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়েছিল। তাই ক্যালেন্ডারে শুধু একটা পাতা হলেও জুলাই এক ঐতিহাসিক এক অধ্যায়, যার পরতে পরতে প্রতিরোধের গল্পও! কেমন ছিল ২০২৪ সালের সেই দিনগুলোতে, এক বছর পিছনে ফিরে তাকানো যাক!
সব কিছু শুরুটা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৫ জুন যখন হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা একে বৈষম্যমূলক ও অনির্যার হিসেবে উল্লেখ করে সোচ্চার হতে থাকেন। তবে ঈদের ছুটির কারণে সেটায় সামরিক বিরতি চলে আসে। এর পর পহেলা জুলাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন থেকেই আন্দোলন ফিরে আসে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে।
শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্লাটফর্ম গঠন করেন, যা দ্রুতই জাতীয় আন্দোলন রূপ নেয়। নেতৃত্বহীন কাঠামো এবং সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে নতুন ধারার গণসংগ্রাম। ৪জুলাই আপিল বিভাগ কোটা ইস্যুতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। তাই পর দিন থেকে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি। ৬জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষণা আসে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি যা ৭জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এক কর্মসূচির আওতায় সারাদেশ সড়ক ও রেলপথে অবরোধ তৈরি হয় চিন্তায় পরে যায় আওয়ামীলীগ সরকার। যে কারণে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন দমাতে দলটির সক্রিয় হয়।
১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে, কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামানো যায়নি। অবশ্যই তখনই শেখ হাসিনা পাত্তা দেন নি। আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৪ জুলাই এক
হাসিনার একটি বক্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। তিনি গণভবনের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের তৈলাক্ত বক্তব্যের জবাবে বলে বসেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান - নাতি - পুতিরা কেউ মেধাবী না যত রাজাকারের বাচ্চারা মেধাবী? কার্যত এই এক বক্তব্যের পরই শেখ হাসিনার বিদায়ের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে যায়।
এই বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। ১৫ জুলাই ঢাবি ছাত্রলীগের হাতে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। এর পর ঢামেকে আহতদের ওপর আবার ও চড়াও হয় ছাত্রলীগ। একই রাতে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে, যার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। সে দিনটাই ছিল গোটা আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট! রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বুক প্রসারিত করে প্রাণ বিলিয়ে দেন, আর তাঁকে গুলি করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই পরপরই জনতার ক্ষোভ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ওই রাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার, কিন্তু তাতে আন্দোলন থামেনি।বরং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বের করে দেন, ঘোষণা করে ' রাজনীতি ' মুক্তি ক্যাম্পাস।
১৭ ও ১৮ জুলাই আন্দোলন যুক্ত হন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ও ঢাকা শহর তখন রূপ নেয় এক রণক্ষেত্র । সেদিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির আওতায় সারাদেশ আন্দোলনের জোয়ার ঘটে, অন্যদিকে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাতে থাকে একের পর এক মানুষ। পরিস্থিতি সামাল না দিতে পেরে বন্ধ করে দাও হয় ইন্টারনেট সংযোগ। শেষমেষ জারি হয় কারফিউ, সেনাবাহিনী নামে রাস্তায়।কিন্তু এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা হাল ছেড়েনি। বরং বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়ে এটিকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। জুলাই পর হয়ে যায় , কিন্তু প্রতিবাদের ঢেউ থামেনি। ৩ আগষ্ট শহীদ মিনারে সমাবেশে ঘোষণা আসে সরকার পতনের এক দফা। ৪ আগষ্ট ঘোষিত হয় মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি যা একদিন এগিয়ে এনে নির্ধারণ করা হয় ৫ আগষ্ট। এটা সেই দিন যা বিবেচিত হয়ে ৩৬ জুলাই হিসেবে।ওই দিনই ঢাকায় মানুষ সমবেত হয় পথে নামে প্রাণের ভয় উপক্ষা করে । বিপদ বুঝতে পেরে সে দিন দুপুরের আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান । বছর ঘুরে জুলাই আবার ও এসেছে ফিরে এসেছে প্রতিরোধ ও বিজয়ের সেই স্মৃতিগুলো।
আজকের সিলেট/এপি
