১৮ জুলাই সিলেটে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, শহীদ হন রুদ্র সেন
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৭ AM

ফিরে দেখা জুলাই ২০২৪

১৮ জুলাই সিলেটে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, শহীদ হন রুদ্র সেন

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮/০৭/২০২৫ ০৯:১৪:৪৪ AM

১৮ জুলাই সিলেটে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, শহীদ হন রুদ্র সেন


২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্ট অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ততক্ষণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গতি কমিয়ে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেটের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সেদিন রাতে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় সবধরনের ইন্টারনেট সেবা। বিঘ্নিত হয় তথ্যপ্রবাহ, বন্ধ হয়ে যায় অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন। গত বছরের ১৭ জুলাই বন্ধ ঘোষিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিকেল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও অনেক শিক্ষার্থী থেকে যান। তাদের অপসারণের জন্য সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলে অভিযান চালিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পর তারা ১৮ জুলাই থেকে তীব্র আন্দোলন শুরু হকেন।

দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নেয় পুলিশ। সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরাও অবস্থান নেন ফটকের পাশে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ১টার দিকে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখের নির্দেশে ক্রিটিক্যাল রেসপন্স ইউনিটসহ বাকি ইউনিটগুলো গেটের সামনে এসে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

কিছুক্ষণ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ ও অনুরোধ করে আরও ঘণ্টাখানেক অবস্থান ধরে রাখতে পুলিশের সহযোগিতা চায় শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের অনড় অবস্থানের কারণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দিক থেকে ইটপাটকেল ও পাথর ছোড়া শুরু হয় পুলিশের দিকে। সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখায় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও শটগানের শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে তিন জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং এক পথচারীকে আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে।

যদিও সেদিন ২টার মধ্যে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিল, তা অপসারণে পুলিশি অ্যাকশনের সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত আর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষের মধ্যেই বিকেল ৫টা থেকে শিক্ষার্থী নয় এমন বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষও আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আখালিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করলে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খাল ভেলায় চড়ে পাড় হতে গিয়ে পানিতে ডুবে শহীদ হন শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিমার সায়েন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন।

এর পর রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। ১০টার দিকে সিলেটে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে বিক্ষোভ কর্মসূচি সেদিনের মতো একেবারেই থেমে যায়।

রাতে ইন্টারনেট একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনও বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধাগ্রস্ত হয়ে যায় তথ্যপ্রবাহ। সঠিক সংবাদ জানার কোনো মাধ্যম না থাকায় গুজবে ভর করতে থাকেন সাধারণ মানুষ।

একবার শোনা যায় ঢাকায় প্রচণ্ড সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। আরেকবার শোনা যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ। সেই রাতে ঢাকার রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে হত্যা করে গুম করে ফেলা হয়েছে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে সিলেটে। কিন্তু গুজব প্রতিরোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের।

আজকের সিলেট/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর