
সিলেট জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক মাসের পর মাস ছুটি না নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, যার ফলে বিদ্যালয়গুলোতে তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে এবং পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমানোর এই প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং অধিকাংশকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২১ মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষকের সংখ্যা উপজেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্বনাথে ২৪ জন এবং বিয়ানীবাজারে ২০ জন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন, যা সর্বোচ্চ। অন্যান্য উপজেলাগুলোতে সিলেট সদরে ১৬ জন, বালাগঞ্জে ১১ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪ জন, গোলাপগঞ্জে ১২ জন, জকিগঞ্জে ১৬ জন, কানাইঘাটে ৭ জন, জৈন্তাপুরে ৪ জন, গোয়াইনঘাটে ১০ জন, কোম্পানীগঞ্জে ১ জন, দক্ষিণ সুরমায় ১৮ জন এবং ওসমানীনগরে ২০ জন শিক্ষক অনুপস্থিত আছেন।
সূত্র আরও জানায়, শিক্ষকরা চাকরি থেকে ইস্তফা না দিয়ে ভ্রমণ বা কাজের ভিসায় বিদেশে চলে যাওয়ায় অনেক স্কুলে শিক্ষক সংকট তীব্র হচ্ছে। পদশূন্যতা সৃষ্টি হলেও নতুন শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না, কারণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও জটিলতার কারণে এই শূন্য পদগুলো পূরণ হতে দীর্ঘ সময় লাগছে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক শাখাওয়াত এরশেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ছুটি ছাড়া ৬০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ২০২৪-২৫ সালে এ ধরনের অভিযোগে ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত করা হলেও জরিমানা করার কোনো বিধান নেই। বর্তমানে জেলায় প্রধান শিক্ষকের ৭৮৮টি ও সহকারী শিক্ষকের ৭৫০টি পদ শূন্য রয়েছে, যা এই সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ পরিবার নিয়ে ভ্রমণ ভিসা বা কাজের ভিসায় ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছেন, আবার কেউ স্বল্পমেয়াদী ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়ছেন এবং আর ফিরে আসছেন না। এই প্রবণতা দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
