ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই শহীদ তারেকের মা
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫০ PM

ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই শহীদ তারেকের মা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪/০৭/২০২৫ ০৪:০২:০৩ PM

ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই শহীদ তারেকের মা


স্বামী রফিক উদ্দিনের মৃত্যুর ৮ মাস পরই ২০২৪ সালের 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে' শহীদ হন ২৯ বছর বয়সী ছেলে টকবগে যুবক তারেক আহমদ। ছেলের এমন মৃত্যু নিমিষেই তছনছ করে দেয় ইনারুন বেগমের সুখের সংসার। অসুস্থতা ও বার্ধক্যের চেয়ে অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন শহীদ জননী ইনারুন বেগম।

জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার পথে হাটলেও দুঃখ-দুর্দশা এখন তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখন অনেকটাই দিশাহারা তিনি। 

স্বামীকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে প্রাণ হারান ছেলে তারেক আহমদ। কলিজার টুকরো ছেলেকে এভাবে হারাতে হবে তা কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি ইনারুন বেগম। এদিকে হারানোর পর থেকে দিনরাত শুধু ছেলের কথা ভেবে দিন কাটছে তাঁর। 

ছেলেকে হারিয়ে পৃথিবীর সব কষ্টের পাহাড় যেন বাসা বেঁধেছে তাঁর বুকে। স্বামী-সন্তান হারিয়ে তিলে তিলে যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁর জীবন।

নিহত তারেক আহমদ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিদনপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তারেক ছিলেন তৃতীয়। তারেকের বড় বোন মর্জিনা বেগম বিবাহিত। অপর বোন তান্নি বেগম ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। 

জুলাই গণভ্যুত্থানে ভাইয়ের মৃত্যুতে তান্নি বলেন, 'বাবার মৃত্যুর পরও আমরা এতটা কষ্ট পাইনি, যতটুকু কষ্ট পেয়েছি ভাই মৃত্যুর খবরে। তারেক আমাদের সব চাওয়া পূরণ করত। মায়ের ওষুধ থেকে শুরু করে সংসারের চাহিদা মিটত তাঁর রোজগার থেকেই। তারেক দুই বছর আগে বিয়ে করেছে। তার একবছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।' 

তারেকের মা ইনারুন বেগম ও বড়বোন মর্জিনা বেগম জানান, ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজার পৌরশহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। আন্দোলনে তারেকও সক্রিয় ছিল। 

৫ আগস্ট দুপুরে কোনো এক সময় পুলিশ তারেককে ধরে নিয়ে যায়। সারাদিন পুলিশ-জনতার সংঘর্ষ চলায় পুলিশের সঙ্গে আমরা কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আর আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে রায়হান ও ময়নুল নামের দু'জন মারা যাওয়ার খবর সমগ্র উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

রাতের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারেকের খোঁজ নেন আত্মীয়-স্বজন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর ৬ আগস্ট ভোরে বিয়ানীবাজার থানার সীমানা দেয়ালের কাছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারেককে পাওয়া যায়। তারেকের কপালে একটি এবং দুই পায়ে গুলির চিহ্ন ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

পরে তাকে উদ্ধার করে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তারেককে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে শহীদ হওয়ার ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারেকের পরিবারের কোনো খোঁজ নেয়নি প্রশাসন কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়নি কোনো সহায়তা। 

স্থানীয় বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী প্রথমদিকে পৃথকভাবে তাঁদের খোঁজখবর নিলেও এখন আর খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।

অপরদিকে তারেক আহমদের স্ত্রী-সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ছলছল করে কেঁদে ওঠে ইনারুন বেগমের দুই চোখ।

তিনি জানান, ছেলের মৃত্যুর মাস দেড়েক পরেই একমাত্র নাতীসহ ছেলের বউকে নিয়ে ব্রাক্ষনবাড়িয়া চলে যান ছেলের শাশুড়ি। এরপর থেকে নাতি কিংবা ছেলেবউ কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই পরিবারের কারোর।

উল্লেখ্য, জুলাই গণভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারেক আহমদ নিহত হলে ২০ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মা ইয়ারুন বেগম। কিন্তু মামলা দায়েরের দুইদিন পর আদালতে মামলা প্রত্যাহারেরও আবেদন করেন তিনি।

আজকের সিলেট/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর