
স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি। স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, হতাহত নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের রক্তের দাগ শুকোয়নি, তখন প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা উর্মির মতো একজন কর্মকর্তার এমন বক্তব্যে যুগপৎ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত গোটা জাতি। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেয় তাপসী তাবাসসুম উর্মি নামের এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আরেকটি বিতর্কিত পোস্ট দেন উর্মি।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হলে প্রথমে তাকে ওএসডি করা হয়, পরে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন সরকার। আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ফেইসবুক পোস্টে উর্মি লিখেন ‘মানে কত বড় বোকার স্বর্গে আছি সন্ত্রাসী একটা ছেলে যে কী না বিশৃংখলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতেই মারা পড়লো সে না-কি শহীদ। এটাও এখন মানা লাগবে!’
আরেকটি পোস্টে উর্মি লিখেন ‘রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
ওএসডি হওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উর্মি বলেন, আইএম নট এ হিপোক্রিট। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে যে কোন জায়গা থেকে বলা যায়। এজন্য যদি চাকরী চলে যায়, এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি গণতান্ত্রিক লড়াই এবং সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে এমন দেশদ্রোহিতামূলক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য গোটা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে এখনো বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা এখনো পদাসীন বা স্বীয়পদে রয়ে গেছে বলে সচেতন মহল যে দাবি ওঠেছে, উর্মির ঘটনায় এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক রদবদল চলছে, বিভিন্ন জায়গায় পদাসীন থেকে অনেক আমলা কর্মকর্তা সরকার বিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত থাকার এমনকি নাশকতার ষড়যন্ত্র করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওএসডি হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি হয়তো যে আশা নিয়ে প্রশাসনের ক্যাডার সার্ভিসে চাকরী নিয়েছিলো, সেই আশায় এখন গুড়ে বালি হতে দেখছে। কারণ উর্মির মতো আরো অসংখ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফাঁস প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়া, জাল সনদ দাখিল ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তান নাতি নাতনীর পরিচয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরী হয়েছে, খুনী স্বৈরাচারী হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে। উর্মির মতো এ ধরনের কিছু সংখ্যক স্বৈরাচারের প্রেতাত্মার আসল রূপ প্রকাশিত হলেও এখনো স্বৈরাচারের হাজারো দোসর প্রশাসনে লুকিয়ে আছে, ভারতীয় ‘র’-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
দেশে বিশৃংখলা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে পতিত স্বৈরাচারকে পুনঃ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে। স্বৈরাচারে পতনের পর, যাদের ভবিষ্যত লুটপাট ও সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা ছিলো, তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাবাসসুম উর্মি নিঃসন্দেহে তাদের একজন। তাই চরম হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই তিনি যে এমন পোস্ট করেছেন তার ফেইসবুক একাউন্টে এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে কথা হচ্ছে, এমন নির্বোধ প্রকৃতির স্যাডিস্ট টাইপের একজন মহিলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদে থাকা প্রশাসনের জন্য রীতিমতো আত্মঘাতী।
সম্পাদকীয়
