
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব বিপর্যয়। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে-যা গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ডে। পাশাপাশি, জিপিএ–৫ প্রাপ্তির সংখ্যাতেও ঘটেছে বড় ধস।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে দুর্বল ফলের কারণে সামগ্রিক পাসের হার কমেছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার সিলেট বোর্ডে পাসের হার মাত্র ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর (২০২৪) পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭১ দশমিক ৬২, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৪০, ২০২১ সালে ৯৪ দশমিক ৮০, আর ২০২০ সালে ছিল শতভাগ। ২০১৯ সালে ছিল ৬৭ দশমিক ০৫, ২০১৮ সালে ৭৩ দশমিক ৭০, ২০১৭ সালে ৭২, ২০১৬ সালে ৬৮ দশমিক ৫৯, ২০১৫ সালে ৭৪ দশমিক ৫৭, এবং ২০১৪ সালে ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
২০২০ সালে করোনাকালে ‘অটোপাস’ পদ্ধতিতে সবাই পাস করায় ফল ভালো হয়েছিল। ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা ও পূর্ববর্তী পরীক্ষার নম্বর যোগ করে ফল প্রকাশ করা হয়, যার ফলে পাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছিল।
এ বছর পাসের হার সবচেয়ে কম মানবিক বিভাগে- মাত্র ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মোট ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছে, যার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১,৩৭৯ জন, মানবিকে ১৫৩ জন, এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭০ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬,৬৯৮- অর্থাৎ জিপিএ–৫ প্রাপ্তি কমেছে প্রায় ৭৬ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯ হাজার ৯৪৪ জন। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষা দিয়েছে। পাস করেছে ৩৫ হাজার ৮৭০ জন- ছেলে ১৩ হাজার ৮৭০ এবং মেয়ে ২২ হাজার ১ জন। জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ৬৮১ এবং মেয়ে ৯২১ জন।
ছেলেদের পাসের হার ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মেয়েদের ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ- অর্থাৎ পাসের হারেও ছেলেরা পিছিয়ে।
উপজেলাভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়- সিলেট বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট জেলায় (৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ), আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে (৪৫ দশমিক ৮০ শতাংশ)। হবিগঞ্জে পাসের হার ৪৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আর সুনামগঞ্জে ৪৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগের দুর্বল প্রস্তুতি, প্রশ্নপত্রের কঠিন ধারা, এবং কোভিড-পরবর্তী শিক্ষার ঘাটতি এই ফলাফলের বড় কারণ হতে পারে।
আজকের সিলেট/এপি
