
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান। একজন মুসলিম নিজে যেমন আমল করবে, তেমনি অপরকেও সেই সত্য ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে। এটি প্রতিটি মুসলমানের সাধ্যানুযায়ী দায়িত্ব ও সৌভাগ্যের কাজ। হাদিস শরিফে এই কাজের গুরুত্ব এতটাই উঁচুতে তুলে ধরা হয়েছে যে, কাউকে হেদায়াতের পথে ফেরানো এক পাল লাল উটের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে।
হজরত সাহল ইবনু সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (স.) হজরত আলী (রা.)-কে খায়বারের যুদ্ধে পাঠানোর সময় বলেন- ‘আল্লাহর কসম! যদি তোমার চেষ্টার দ্বারা আল্লাহ একটি লোককে হেদায়াত দেন, তবে তা তোমার জন্য এক পাল লাল উটের চেয়েও উত্তম।’ (সহিহ বুখারি: ৩৭০১; সহিহ মুসলিম: ২৪০৬; আবু দাউদ: ৩৬৬১)
‘লাল উট’ কেন উপমা?
আরবের প্রেক্ষাপটে লাল উট ছিল সবচেয়ে দামী, দুর্লভ ও মর্যাদার প্রতীক। একে আভিজাত্যের চিহ্ন বিবেচনা করা হতো। নবীজি (স.) এই দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছেন- কাউকে ইসলাম, ঈমান বা সৎপথে ফিরিয়ে আনা দুনিয়ার সবচেয়ে মহামূল্যবান সম্পদের চেয়েও উত্তম ও স্থায়ী।
দ্বীনি দাওয়াত সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ: ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে কোরআন শেখে ও শেখায়।’ (বুখারি: ৫০২৭)
সমাজ গঠনে অপরিহার্য: ‘তোমরা এমন এক জাতি, যারা মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছ। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখো...’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)
দাওয়াত হবে হেকমত ও উত্তম ভাষায়
‘আপনার প্রতিপালকের পথে ডাকুন হেকমত ও সুন্দর উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন শ্রেষ্ঠ উপায়ে।’ (সুরা নাহল: ১২৫)
নবীজির (স.) দাওয়াতের মডেল
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের পরতে পরতে ছিল দাওয়াতের মিশন। তিনি সরলতা, সহিষ্ণুতা, উত্তম আচরণ ও দৃঢ় যুক্তি দিয়ে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় আহ্বান করেছেন।
সদকায়ে জারিয়া: কারও হেদায়াতের মাধ্যমে আপনি প্রতিনিয়ত সওয়াব পেতে থাকবেন যতদিন সে আমল চালিয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৬৭৪)
সমাজে নৈতিকতা বৃদ্ধি: হেদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজে বদলায় না, বরং আশপাশকেও আলোকিত করে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর একটি হচ্ছে মানুষকে হেদায়াতের পথে আনা। ইরশাদ হয়েছে- আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং সৎকাজ করে। (সুরা ফুসসিলাত: ৩৩)
কে দাওয়াত দেবে? কিভাবে শুরু করবে?
দাওয়াত দেওয়া কেবল বক্তা বা স্কলারদের কাজ নয়—আপনারও কাজ। কীভাবে?
১. প্রথমে নিজেকে শুদ্ধ করুন। এরপর আচরণ ও আমল দিয়ে দাওয়াত শুরু করুন
২. পরিবারকে দ্বীনি শিক্ষা দিন
৩. বন্ধুদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুন
৪. সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশুদ্ধ নিয়তে সংযতভাবে প্রাসঙ্গিক ইসলামিক কনটেন্ট শেয়ার করুন
৫. জ্ঞান নিয়ে, কিন্তু বিনয় ও হেকমত সহকারে উপস্থাপন করুন
নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকাজের দিকে আহ্বান করে, সে ওই আমলকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; এবং ওই ব্যক্তির সওয়াব কমানো হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৬৭৪)
মোটকথা, একজন মানুষকেও যদি আপনি হেদায়াতের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তবে তা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য। এমনকি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদের চেয়েও তা উত্তম। কারণ, আপনি কাউকে জান্নাতের পথে আহ্বান করেছেন।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের সাধ্যানুযায়ী দাওয়াতি কাজ করি— জ্ঞান, নম্রতা, দয়া ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে। এতে আমাদের সমাজ হবে সুন্দর, আমাদের আখেরাত হবে সফল।
আজকের সিলেট/এপি
