ছুটিতে শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক সময় ব্যবস্থাপনা ও নৈতিক শিক্ষা
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৭ PM

ছুটিতে শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক সময় ব্যবস্থাপনা ও নৈতিক শিক্ষা

----------------

প্রকাশিত: ০৭/০৬/২০২৫ ০১:৫৬:৪১ AM

ছুটিতে শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক সময় ব্যবস্থাপনা ও নৈতিক শিক্ষা


ঈদুল আযহার ছুটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দীর্ঘ অবকাশের সময়। এ সময় তারা পাঠ্যবইয়ের চাপমুক্ত থাকে, পরিবার ও সমাজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে, এবং নানা রকম অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়। তবে ছুটির এই সময় কেবল বিশ্রাম বা আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে গঠনমূলক কাজে ব্যয় করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্বগুণ, সময় ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সচেতনতা অনেক গুণে উন্নত হতে পারে।


সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মউন্নয়ন

ছুটির সময় শিক্ষার্থীদের জন্য সময়কে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা। নিয়মিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, বইপড়া, কিছুটা সময় লেখাপড়ার চর্চা—এইসব অভ্যাস ছুটির সময়েই গড়ে তোলা যায়। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের একটি দিনসূচি তৈরি করতে সহায়তা করা, যাতে শিক্ষার্থী সময় নষ্ট না করে নিজেকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করতে পারে। এ সময়ে কিছু স্কিল শেখারও সুযোগ থাকে—যেমন: টাইপিং, মৌলিক কম্পিউটার চালনা, প্রেজেন্টেশন স্কিল, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।


সমাজসেবায় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের বিকাশ

শিক্ষার্থীরা নিজেদের ওয়ার্ড বা পাড়াভিত্তিক ছোট ছোট কমিটি গঠন করে সামাজিক কাজে যুক্ত হতে পারে। এই কমিটির মাধ্যমে আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, ঈদের সময়ে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা, প্রতিবেশীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা, রাস্তার শিশুদের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি বাস্তবধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা সমাজের অংশ হিসেবে নিজের ভূমিকা উপলব্ধি করতে শিখবে। এতে নেতৃত্ব, দলগত কাজের অভ্যাস এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে উঠবে।


এ ধরনের কমিটি যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে, তাহলে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করা সম্ভব। যেমন: ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে গিয়ে এলাকাভিত্তিক সমস্যার কথা জানানো, মিটিংয়ে অংশগ্রহণ, জনসচেতনতা কার্যক্রমে সহায়তা করা ইত্যাদি।


সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার

ছুটির এই সময় সৃজনশীলতার বিকাশের এক দুর্দান্ত সুযোগ। শিক্ষার্থীরা চিত্রাঙ্কন, গল্প বা কবিতা লেখা, হস্তশিল্প তৈরি, ভিডিও বানানো কিংবা ছোট ব্লগ লেখার মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে পারে। বিশেষ করে যারা প্রযুক্তি পছন্দ করে, তারা ফটো এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রেজেন্টেশন তৈরি, বা ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণের মতো কাজ শিখতে পারে। এতে সময়ও ভালো কাটবে, আবার ভবিষ্যতের পেশাগত দক্ষতার ভিত্তি তৈরি হবে।


পরিবেশ সচেতনতা ও নাগরিক দায়িত্ব

কোরবানির সময়ে পশুর বর্জ্য অপসারণ, রাস্তার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব আচরণ একটি বড় সামাজিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার্থীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারিবারিক ও পাড়াভিত্তিক উদ্যোগ নিতে পারে। যেমন: পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ‘পরিবেশ রক্ষা করো’ পোস্টার বিতরণ, বা সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার। এসব কর্মকাণ্ড তাদের নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করে এবং একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।


পারিবারিক বন্ধন ও মানবিক গুণ

ঈদের ছুটি পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর অন্যতম ভালো সুযোগ। এই সময় পরিবারের ছোটদের খেয়াল রাখা, বৃদ্ধ সদস্যদের পাশে থাকা, রান্নাবান্না বা গৃহস্থালির কাজে সহায়তা করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতার চর্চা করতে পারে। বাড়ির বাইরে না গিয়ে কিংবা অতিরিক্ত মোবাইলে সময় না দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, একসাথে খাওয়া, আড্ডা দেওয়া—এইসব সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।


স্থানীয় সমস্যা সমাধানে সক্রিয়তা

শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা যেতে পারে তাদের নিজ এলাকার একটি সমস্যা চিহ্নিত করে সেটির ওপর কাজ করতে। যেমন: কোথাও খোলা নর্দমা থাকলে সেটি পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া, শিশুশ্রম প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলা, বা পাড়ার রাস্তায় যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা রোধে স্থানীয় প্রচারণা চালানো। এগুলোর মধ্য দিয়ে তারা সক্রিয় নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হবে।


পরিশেষে বলা যায় ঈদুল আযহার ছুটি আনন্দের পাশাপাশি এটি শিক্ষার্থীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকাশমান সুযোগ। সময় ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্বের বিকাশ, সামাজিক সচেতনতা, সৃজনশীলতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধ—এই সকল বিষয় অনুশীলন করে শিক্ষার্থীরা নিজেকে একজন দায়িত্ববান, দক্ষ ও মানবিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। শিক্ষকদের উচিত বিদ্যালয়ে ছুটির আগে শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে ঘরে এমন পরিবেশ তৈরি করার, যেখানে শিক্ষার্থী সঠিকভাবে তার সময়কে কাজে লাগাতে পারে। তাহলে ইদুল আযহার ছুটি শুধু আনন্দের সীমায় আবদ্ধ থাকবে না, হয়ে উঠবে এক অর্থবহ শিক্ষার সময়কাল।


সাখাওয়াত হোসেন

সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাইস্কুল

আজকের সিলেট/এসসিজে

সিলেটজুড়ে


মহানগর