
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর হকার উচ্ছেদ-পুনর্বাসনে বার বার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সর্বশেষ গত বছরের মার্চ মাসে কোটি টাকা ব্যয়ে লালদীঘিরপাড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করে হকারদের ব্যবসার জায়গা করে দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হয়েও শেষ পর্যন্ত তিনিও হকারদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।
সবশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট আনোয়ারুজ্জামান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সিটি কর্পোরেশন অভিভাবকহীন হয়ে যায়। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার প্রশাসকের দায়িত্ব নিলেও হকারদের দৌরাত্ম বরং আরও বেড়ে যায়। রাস্তায় বসে পরে দিন দুপুরে।
এবার সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলমের সঙ্গে হকার উচ্ছেদ অভিযানে ফের মাঠে নেমেছেন সিসিকের দুই বারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। অভিযানে হকারদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধভাবে দখলে রাখা সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বে থাকার পরও হকার উচেছদ করতে না পারা সেই আরিফুল হক চৌধুরীর এমন তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তবে নতুন ডিসি হিসেবে সারোয়ার আলম উদ্যোগ নিলে হকার পুনর্বাসন বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছেন নগরবাসাী।
সিলেট নগরীর প্রধান সড়ক ও ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরে হকারদের দখলে। পথচারীরা চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন প্রতিদিনই। নানা সময় উচ্ছেদ অভিযান চালালেও খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি এসব উদ্যোগ। কয়েকদিনের মধ্যেই হকাররা আবার ফিরে আসেন আগের জায়গায়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী টানা দুইবারের মেয়র থাকাকালে অসংখ্যবার হকার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করেছেন। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে নগরীর ফুটপাত উদ্ধারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে তাঁর সময়ে। মেয়র হিসেবে তিনি কঠোর অবস্থান নিলেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক চাপ, হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, পুনর্বাসনের সুস্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব এবং প্রশাসনিক তদারকি অব্যাহনা থাকায় তার সব উদ্যোই সবসময় ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর হকার সমস্যা সমাধানে কিছুটা ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেন। তিনি উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পাশাপাশি নির্দিষ্ট স্থানে হকারদের জন্য বিকল্প জায়গা নির্ধারণের পরিকল্পনা নেন। গত বছরের ১০ মার্চ কোটি টাকা ব্যয়ে লালদীঘিরপাড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করে হকারদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্বে থাকাবস্থায়ও হকাররা রাস্তায় চলে আসতো। সবশেষ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আনোয়ারুজ্জামানও পালিয়ে যাওয়ায় পর সব ভেস্তে যায়। ফের আগের মতোই ফুটপাত দখল করে বসেন হকাররা।
নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, কোর্টপয়েন্ট ও আম্বরখানার মতো ব্যস্ত এলাকাগুলোতে ফুটপাতে চলাচল প্রায় অসম্ভব।
এ অবস্থায় সিলেট নগরের সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে দিতে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন। গত শনিবার বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত কিন ব্রীজ এলাকায় অভিযান পচিালনা করা হয়। এ সময় হকারদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধভাবে দখলে রাখা সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
কিনব্রিজ এলাকায় অবৈধভাবে অবস্থানরত হকারদের সরিয়ে দিতে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-ধরা সিলেটের সদস্য সচিব আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, নগরীতে যেভাবে হকাররা সড়ক দখল করে আছে, এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও কেউ উদ্যোগ নেননি। নতুন জেলা প্রশাসক নতুন উদ্যোগ নেওয়ায় এবং সাবেক মেয়রও এগিয়ে আসায় আশা করা যাচ্ছে এবার ভালো কিছু হবে।
সিলেট কল্যান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহের বলেন, ‘হকার পুনর্বাসন কার্যক্রমে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দেখে আমরা হতাশ। কারণ তিনি দায়িত্বে থাকাকালে কোনো কিছু করতে পারেননি। এখন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগের সঙ্গে তিনি এসে আবার যোগ দিয়েছেন।‘
তিনি বলেন, ‘যতো সময় এধরণের উদ্যোগে রাজনীতিবিদ থাকবেন, ততো সময় হকার উচ্ছেদ হবে না। তবে এবার সিলেটের জেলা প্রশাসক বেশ সাহসী মানুষ। তিনি কোনো প্রভাবে প্রভাবিত না হলে এবার হকার পুনর্বাসন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হবে।‘
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাঁড়া দেননি। তবে গত শনিবার ফুটপাত পরিদর্শনের সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বর্তমান প্রশাসনের আন্তরিকতা ও উদ্যোগ আছে। তারা স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে ফুটপাত ও রাস্তা হকারমুক্ত করতে এগিয়ে এসেছে। নিশ্চয়ই সবার সহযোগিতায় শিগগির ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত হবে।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘আগে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এবার খুব কঠোরভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হকারদের পুনর্বাসন ও নির্দিষ্ট জায়গায় বসার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে মধ্যে তারা জায়াগা না গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, আগে আমাদের কাজটা করতে দেন। তারপর ফলাফল দেখবেন। ফলাফল আগে প্রকাশ করা যাবে না। এবার আগের মতো ফলাফল হবে না।
হকার পুনর্বাসন ছাড়াও সিলেটে হলি ডে মার্কেট করা যায় কী না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটে হলি ডে মার্কেট করার প্রয়োজন নেই। কারণ এখানকার হকাররা একটা জায়গায় স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সবাই বসতে পারবে। সুতরাং আলাদা করে হলি ডে মার্কেট করার দরকার আছে বলে আমি মনে করছি না।
আজকের সিলেট/এপি
