পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত সিলেট
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৪৫

পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত সিলেট

সাদিকুর রহমান চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৯/০৪/২০২৪ ০১:৪৪:০২

পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত সিলেট


পবিত্র রমজান মাস শুরুর পর থেকেই পর্যটন নগরী সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রায় জনশূণ্য ছিল। পর্যটকহীন অবস্থায় অলস সময় পার করছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে রমজান মাসের শেষ সময়ে এসে ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। রং-তুলির আঁচড়ে সেজেছে জনপ্রিয় সব হোটেল-রিসোর্ট। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের কাছে সিলেটের জাফলং, সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, চা-বাগান বেশ জনপ্রিয়।

এ ছাড়া সিলেটজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ছোট পাহাড়-টিলা আর ঝরনা দেখতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। শাহজালাল (রহ.) এবং শাহপরান (রহ.) মাজারেও প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে কিছুটা স্বস্তির খোঁজে অনেকেই সিলেটে ভিড় জমাবেন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১০ লাখ পর্যটকের উপস্থিতি আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।এছাড়া দেশের অন্যতম মিঠাপানির জলারবন রাতারগুলের প্রকৃতি, জাফলংয়ে মায়াবী ঝরণা, আর নীল পানির নদ লালাখাল তো রয়েছেই।

সিলেটের জনপ্রিয় সব পর্যটনকেন্দ্রে সারাবছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বর্ষা মৌসুমেই স্বরূপে ফিরে আসে। মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য। সিলেট নগর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। এছাড়া, রিসোর্টগুলোও প্রায় অর্ধেক বুকিং করে রাখা হয়েছে।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সিলেট নগরীর প্রথম সারির হোটেল ও শহরতলীর রিসোর্টগুলোতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ছাড়ও দেয়া হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ সাদা পাথরে দীর্ঘদিন ধরে নৌকার মানুষ পারাপারকারী একজন মাঝি জানান, রমজানের আগে সারা বছরই পর্যটক আসে। এই মাসটাতে খুব একটা পর্যটকরা আসেন না। তবে আশা করি এবার ঈদে বেশ পর্যটক আসবেন। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

জাফলংয়ের ব্যবসায়ী জানান, রমজান আসার পর থেকে ব্যবসায় ভাটা। সারা বছর এই সময়ের অপেক্ষায় আমরা থাকি। আশা করি ব্যবসা ভালো হবে।

সিলেটের বিভিন্ন ট্যুরিজম ক্লাবগুলো জানায়, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢল নামে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এবার ঈদুল ফিতরের সাথে যোগ হয়েছে বাংলা নববর্ষ তাই পর্যটকদের আনাগোনা আগের থেকে বেশি হতে পারে। এরই লক্ষ্যে পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন  তারা।

ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে এসে যাতে হয়রানি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার কেউ না হন, এ জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা, তৎপর আছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ এরই মধ্যে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগম কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত রোববার জাফলংয়ে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব জোনের ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটসমূহে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, ট্যুরিস্ট গাইড ও ক্যামেরাম্যানদের দ্বারা প্রতারিত না হন, আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পোশাক এবং সাদা পোশাকে একাধিক ইউনিট নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা নিয়েছি। পর্যটকদের নিরাপদ আগমন ও প্রস্থানে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার থাকবে।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিলেটে এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে। ইতোমধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশকেও বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘প্রশাসনের সাথে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে, তারা পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। করোনা পরে ব্যবসা বাণিজ্য আশানুরুপ না হলেও এবার সিলেটের পরিবেশ স্বস্তিদায়ক ছিল। ক্রেতারা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পেরেছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, সারা বছরই সিলেটে পর্যটকরা আসেন। শুধু পর্যটন স্পটেই নয়, বিমান পথ, রেল স্টেশন, বাসস্টেশন গুলোতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।‘

তিনি বলেন, পর্যনটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। কেউ সমস্যায় পড়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজকের সিলেট/এসসি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর